কারও মাথায় হেলমেট, কেউ মুখোশ পরা; রামদা হাতে তাঁরা মারধর করছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের। কুপিয়ে জখম করার পর শিক্ষার্থীদের লাথিও মারা হয়। এ ঘটনা ঘটেছে গতকাল রোববার বেলা আড়াইটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস লাগোয়া জোবরা গ্রামে। তবে এক দিন পার হলেও মুখোশ পরা ব্যক্তিদের শনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
ভাড়া বাসার দারোয়ান এক ছাত্রীকে মারধর করেছেন—এমন খবরে গত শনিবার রাত সোয়া ১২টার দিকে জোবরা গ্রামবাসীর সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ শুরু হয়। সেদিন রাত প্রায় সাড়ে তিনটার দিকে সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে গেলে দুই পক্ষ সরে যায়। তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা যায়নি। এর জের ধরে গতকাল রোববার দুপুর ১২টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত সংঘর্ষ চলে। দুই দিনের সংঘর্ষে অন্তত ২০০ শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হন।
আহত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে ও সংঘর্ষ চলাকালে সরেজমিন দেখা যায়, মুখোশ ও হেলমেট পরা ব্যক্তিরা শিক্ষার্থীদের উপর্যুপরি হামলা করেছেন। তাঁদের হাতে ছিল রামদা, লোহার রড, ইটের টুকরা। মাথায়, হাতে, কোমরে কোপানো হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ধ্রুব বড়ুয়া প্রথম আলোকে বলেন, শিক্ষার্থীদের অলিগলি থেকে বের করে পিটিয়েছেন স্থানীয় লোকজন। এ সময় মুখোশ ও হেলমেট পরা ব্যক্তিরা ছিলেন। প্রশাসনকে অবশ্যই এই ব্যক্তিদের খুঁজে বের করতে হবে।
লোকপ্রশাসন স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী মো. শাহাদাত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, সংঘর্ষ চলাকালে ৩০ থেকে ৪০ জনের মতো ব্যক্তি ছিলেন, যাঁদের মাথায় ছিল হেলমেট। এ ব্যক্তিদের অবশ্যই খুঁজে বের করতে হবে। তাঁরা সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিশে হামলা চালান।
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সভাপতি আলাউদ্দিন মহসীন পুরো ঘটনার জন্য প্রশাসনকে দোষারোপ করেছেন। তাঁর দাবি, শিক্ষার্থীদের হামলায় হাটহাজারী ও ফটিকছড়ি থেকেও লোকজন আনা হয়েছে।
ক্যাম্পাসে এত বড় সংঘর্ষের এক দিন পরও কোনো মামলা হয়নি। আজ বেলা দুইটা পর্যন্ত কাউকে আটক বা গ্রেপ্তার করা হয়নি বলে জানান হাটহাজারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবু কাওসার মোহাম্মদ হোসেন।
বিশ্ববিদ্যালয় ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মো. সাইফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ক্যাম্পাসে পরিস্থিতি আপাতত স্বাভাবিক রয়েছে। ক্যাম্পাসে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা আছেন।
ঘটনার সূত্রপাত যেভাবে
শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের এক ছাত্রী ক্যাম্পাসের ২ নম্বর গেটের কাছে একটি ভবনে ভাড়া থাকেন। শনিবার দিবাগত রাত সোয়া ১২টার দিকে তিনি ওই ভবনে প্রবেশের চেষ্টা করলে ভবনের দারোয়ান তাঁকে মারধর করেন। এ সময় ২ নম্বর গেটে থাকা শিক্ষার্থীরা দারোয়ানকে ধরতে গেলে তিনি পালিয়ে যান। শিক্ষার্থীরা তাঁকে ধাওয়া করলে স্থানীয় লোকজন ইটপাটকেল মারা শুরু করেন। তখন সংঘর্ষ ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
ওই ছাত্রী বলেন, ‘আমি প্রতিদিন সময়মতো বাসায় আসি। সেদিনও দেরি করিনি। ১২টার মধ্যে চলে আসি। দারোয়ানকে দরজা খুলতে বললে তিনি খুলছিলেন না। পরে জোরে ডাক দিলে তিনি অকথ্য ভাষায় কথা বলেন। আমি জবাব দিতে গেলে হঠাৎ চড় মারেন। সঙ্গে সঙ্গে আমার রুমমেটরা নামলে তিনি আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন এবং লাথি মারতে থাকেন। এ সময় রুমমেট ও আশপাশের লোকজন এগিয়ে আসেন।’
এ ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের ২ নম্বর গেট-সংলগ্ন জোবরা গ্রামে গিয়ে জড়ো হন। এলাকাবাসীর সঙ্গে বাগবিতণ্ডার এক পর্যায়ে সংঘর্ষ বাধে।
শনিবার দিবাগত রাত প্রায় সাড়ে তিনটার দিকে সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে গেলে দুই পক্ষ সরে যায়। তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা যায়নি। রাতেই অন্তত ৭০ জন আহত হন। তাঁদের মধ্যে অন্তত ১০ জনকে কুপিয়ে আহত করা হয়েছে। রাতের ঘটনার পর ২ নম্বর গেট থেকে জোবরা হয়ে চট্টগ্রাম-হাটহাজারী মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ করে দেন স্থানীয় লোকজন।